ফরিদগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পৌর আ’লীগের কমিটিতে চরম বিশৃঙ্খলা ॥ বড় সংঘাতে আশংকা

নবী নোমান: সারাদেশের ন্যায়ে তৃতীয় ধাপে অর্থাৎ জানুয়ারীর শেষে কিংবা ফেব্রুয়ারীর প্রথমে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রায় দু’ডজন প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় মূখরিত ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকা। ঠিক সেই মূহুর্তে আবারও মাথা ছাড়া দিয়ে ওঠেছে পৌর আওয়ামীলীগের কমিটির পদ-পদবী সংক্রান্ত জটিলতা। কারণ গত ২৭ জুন পৌর আ’লীগের সভাপতির মৃত্যুর পর দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কে দায়িত্ব পালন করবে এই নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে পৌর আওয়ামী পরিবারের মাঝে। এই নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত পৌর আওয়ামীলীগের নেতাকমীদের মধ্যে বড় ধরনে সংঘাতেরও আশংকা করছেন অনেকে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ ডিসেম্বর ২০১২ সালে অনুষ্ঠানিক সম্মেলনে এবং ভোটের মাধ্যমে পৌর আ’লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মোতাহার হোসেন রতন ও সাধারন সম্পাদক বর্তমান পৌর মেয়র মাহফুজুল হক। ৮ বছর আগের অনুমোদীত সেই কমিটিতে কে ছিল ১ নাম্বার বা সিনিয়র সহ-সভাপতি, তা নিয়ে চলছে ঝড়। আর যিনি সিনিয়র সহসভাপতি থাকবে, তিনি সভাপতির অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দায়িত্ব পালন করবেন এমনিটি হচ্ছে দলীয় বিধান। সেই সময় উপজেলা কমিটির কাছে তখন পৌর সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক ৬৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি পুর্ণাঙ্গ কমিটি সৃজন করে, তা অনুমোদনের জন্য উপজেলা কমিটির কাছে প্রেরণ করে। সেই মতে উপজেলা কমিটিও অনুমোদন দেয়। বিপত্তি হচ্ছে উপজেলা সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কর্তৃক স্বাক্ষরিত অনুমোদীত পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটিতে প্রথম বা ১ নাম্বার সহসভাপতি লেয়াকত হোসেন পাটওয়ারী এবং আরেকটিতে পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাবেক ছাত্র নেতা মজিবুর রহমান পাটওয়ারী। ফলে এই নিয়ে শুরু হয় নানা তর্ক বিতর্ক। পৌর এবং উপজেলা কমিটির একটি অংশ মজিবুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ঘোষণা করে পৌর আ’লীগের কার্যক্রম পরিচালা করছে অপর দিকে পৌর মেয়রসহ পৌর কমিটির অপর অংশে লেয়াকত হোসেন পাটওয়ারীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন সভা সেমিনারে অংশ নেয়াচ্ছে। অপরদিকে মজিবুর রহমান ও তার অনুসারীরা হঠাৎ করে মজিবুর রহমানকে পৌর নির্বাচনের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচার-প্রচারণা শুরু করাতে দু’গ্রুপের মধ্যে শুরু হয় আরোও উত্তেজনা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক গত ১৮ ডিসেম্বর-২০১২ সালে মজিবুর রহমান পাটওয়ারীকে সহসভাপতি দেখিয়ে ৬৫ সদস্য একটি কমিটি অনুমোদ দিয়েছেন। অপর দিকে সেই সময়ের আরেকটি কমিটিতে লেয়াকত হোসেন পাটওয়ারীকে সহসভাপতি দিয়ে আরেকটি কমিটি অনুমোদন দেওয়া আছে। দু’টি পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি মোতাহার হোসেন পাটওয়ারী, সাধারন সম্পাদক মাহফুজুল হক সহ সভাপতি কয়েকজনের মধ্যে একটিতে মজিবুর রহমান আরেকটিতে লেয়াকত হোসেন পাটওয়ারী প্রথম বা ১ নাম্বার সহ সভাপতি। দলের সিনিয়র অনেক নেতারা বলছেন, পৌর কমিটির সম্মেলনের পর পর উপজেলা কমিটির শীর্ষ নেতাদের কয়েকজনের সাথে পৌর কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের মধ্যে তখনকার সময়ে দ্বন্ধ লাগার কারণেই কৌশলে এই কাজটি হয়েছে।
এই বিষয়ে, পৌর কমিটির সাধারন সম্পাদক পৌর মেয়র মাহফুজুল হক জনান, পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি চক্র পরিকল্পিত ভাবে সু-শৃঙ্খল পৌর কমিটির মধ্যে দ্বদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, অবশ্যই উপজেলা কমিটির অনুমোদন অনুযায়ী পৌর কমিটির মোতাহার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে লেয়াকত হোসেন পাটওয়ারী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। আর মজিব হচ্ছে এই কমিটির সদস্য। একই কথা জানান, পৌর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রিপন।
অপর দিকে, মজিবুর রহমান বলেন, উপজেলা কমিটি ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বরর অনুমোদীত কমিটিতে আমি প্রথম সহসভাপতি। সেই মতে আমি পৌর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।
উপজেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার জনান, সেই সময় পৌর কমিটির নির্বাচিত সভাপতি সাধারন সম্পাদক সৃজিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে লেয়াকত বা মজিব ১ নং সহ সভাপতি কে ছিল তা আমার মনে নেই। কারণ আমার কাছে কোন কমিটির কাগজপত্র নেই। সব কিছু সভাপতি ও দপ্তর সম্পাদকের কাছে। তবে এই নিয়ে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা করার কোন সুযোগ নেই।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল খায়ের পাটওয়ারী বলেন, উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্তে মতে, পৌর কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১২ সালের সেই কমিটিতে মজিবুর রহমানকে প্রথম সহ সভাপতি করা হয়। সেই মতে, মজিবুর রহমান পৌর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয়ে পৌর কমটির কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে এই বিষয়ে কেউ কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
পৌর আওয়ামীলীগের এই হ-যব-র-ল অবস্থা বিষয়ে, জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদকের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন- উপজেলা কমিটি তখনকার সময় যে কমিটি অনুমোদন দিয়েছে তার বাহিরে অন্য কিছু মেনে নেওয়া যায় না। সম্মেলন পরিবর্তি উপজেলা কমিটির সভাপতি সাধারন সম্পাদকের স্বাক্ষরিত কমিটিই বৈধ। এই বাহিরে ফটো কপি করে কেউ নতুন নেতা হলেই চলবে না। কোন অবস্থায় দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা মেনে নেওয়া হবে না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *