ফরিদগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে ইরি-বোরো ধানের উৎপাদন

মামুন হোসাইন: আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ও পর্যাপ্ত পানি, সার ও ভালো বীজতলা পাওয়ায় ফরিদগঞ্জে এবার ইরি-বোরো ধান লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। ফরিদগঞ্জ পৌরসভারসহ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ধান কাটার পূর্বে দিগন্ত জুড়ে এখন সোনালী ও সবুজের সমারোহ ছিল। যেদিকে তাকাই, সেদিকে শুধু ধানের সোনালি রঙ চড়ে ছিল। ইতোমধ্যে শুরু হয়ে এখন ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধানের আবাদ ও ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে সোনালি হাসি। কোন প্রকার ঝড় তুফান না থাকায় কৃষক কৃষাণিরা খুব সহজেই তাদের ফসল ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এই বছর সরকারী হিসেবে ফরিদগঞ্জ উপজেলা মোট ২৩ হাজার ৬শ’৯৩ একর জমিতে বোর ও ইরি ধান চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। কিন্তু আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় কৃষকের উৎপাদনের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে মূল লক্ষমাত্রা থেকে ফলন বেশী হয়। এখন বাজারে ভালো দাম পেলে স্বপ্ন শতভাগ পূর্ণ হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা।

কৃষকদের কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে, কালবৈশাখী ঝড় ও অতিবৃষ্টি না হওয়ায় এবং জমিতে পর্যাপ্ত সেচ পানি পাওয়া ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে (২০২০-২১) ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ৪শত ৫০ হেক্টর ধরা হয়েছে। সেখানে চাষাবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৯শত ৫০ হেক্টর। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ছিল ৬.৩ টন। যার ফলে এ বছর ধান থেকে চাল উৎপাদন হবে প্রায় ৪২ হাজার মেট্রিক টন। এছাড়া এ বছর এই প্রথম আধুনিক জাতের ব্রী ধান- ৮৯, ৮৪ ৬৭,১২,৯৬, ৭৪,৮১ ফরিদগঞ্জে উৎপাদন করেছে কৃষকরা।

পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের লিয়াকত মিয়া জানান, আমি ১৫০ শতকে ইরি ও বোরো ধানের আবাদ করেছি। ধান কাটা শেষ করেছি প্রায় ৬০ মণ ধান পেয়েছি, ফলনও ভালো পেয়েছি। এখন সেই ধান ন্যায্য মূলে বিক্রি করতে না পারলে আমরা বিপদে পড়ে যাবো।

১০নং গোবিন্দপুর ১ নং ওয়ার্ডের কুষক ইউছুফ গাজী জানান আমি ১২০ শতকে ধানের চাষ করেছি, ধানের ফলন ভালো হয়েছে, সরকারের কাছে ভাবে ধান বিক্রি করতে পারলে লাভবান হবো। পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের অপর এক কৃষক ইসমাইল হোসেন জানান,আমি ৮০ শতকে ইরি ও বোরো ধানের আবাদ করেছি, তবে সময় মতো সেচ পানির না থাকার কারণে খরচ একটু বেশি হয়েছে। তবে সরকারি দাম অনুযায়ী মোটামুটি লাভবান থাকবো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আশিক বিন মাহমুদ জানান, চলতি মৌসুমে কৃষক যাতে লাভবান হয় সেজন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রেখেছি ও পরামর্শ দিয়েছি। যার ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে ধানা কাটা প্রায় শেষ হয়েছে । আমরা ২ হাজার ৮শত কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ৬০ কেজি ইরিও বোরো বীজ দিয়েছে। আশা করি আগামি দুই একদিনের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে উঠবে।


এদিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা এবার কৃষকদের কাছ থেকে তালিকাভ‚ক্ত প্রায় ১৬শ’ ৮৩ জন কৃষকের মধ্যে ৭শ’ ৩০ জন থেকে সরকার ১৩শ’ ১৩ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করবে বলে খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে,সরকারের দেওয়া নির্ধারিত ধানের মূল্য মন প্রতি ১০শ’ ৮০ টাকা ধরা হয়েছে। সেইমতে চলতি মাসে উপজেলা ধান-চাল ক্রয় কমিটি লটারীর মাধ্যমে ৭শ’ ৩০ জন কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা শুরু করে দিয়েছে। এদের মধ্যে প্রথম ধাপে ৫শ’১০ জনের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হচ্ছে।
লক্ষমাত্রার চেয়েও বেশী ধান উৎপাদনে কৃষকরা সফল ও মুখে হাসি ফুটলেও উৎপাদিত ধান নিয়ে তারা শঙ্খায় আছে। কারণ এই ধান যদি তারা সঠিক সময় বিক্রি করতে না পারে তাহলে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও তারা দারুণ ক্ষতি মূখে পড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *