
লেখাটা কিভাবে শুরু করবো তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। কারণ আমি তেমন একটা লিখতে জানি না এবং লিখতে শিখিনি। সম-সাময়িক সময়ে সমাজ-সংসারের মানুষের মধ্যে ঠিক যে লেখা চলে বা মানুষ পড়তে চায় তা যে আমার জানা বা শিখা হয়নি তা অতিসম্প্রতি একমাস জেল খেটে বুঝতে পেরেছি। সম-সাময়িক সময়ে যে লেখা চলে যদি তা শিখতাম তবে হয়তো একমাস(১৬ মে-১৪ জুন) হয়তো দীর্ঘ একমাস জেলেরঘানি টানতে হতো না আমার। লেখা না জানা বা শেখার কারণে চাঁদপুরের শাহরাস্তি মডেল থানায় ডিজিটাল আইনের ২৬, ২৭, ২৯ ও ৩১ ধারায় একটি মামলা হয়েছে। যার নম্বর-১৩, তারিখঃ ১৬/০৫/২০২১ইং ।
১৬ মে’২০২১ ইং রবিবার ভোর ৪ ঘটিকায় আমাকে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে শাহরাস্তি মডেল থানার পুলিশ। সেদিন আনুমানিক রাত ৩ ঘটিকায় আমার গ্রামের বাড়িতে শাহরাস্তি মডেল থানা থেকে একদল পুলিশ গিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়।আমার অপরাধ আমি স্থানীয় এক নেতার ডাকাতিয়ানদী বালি কান্ডের নিউজ পত্রিকায় প্রকাশের পর তার লেখার স্কিন শর্ট নিয়ে তাতে মন্তব্য করে তার সন্মান হানি করেছি। বলে রাখা ভালো আমার আরো আগেই এমন জেলে যাওয়া উচিত ছিলো। এতে হয়তো আরো আগেই নিজেকে সংশোধনের সুযোগ পেয়ে নিজেকে আরো পরিশীলীত ও পরিমার্জিত করার সুযোগ পেতাম এবং হয়তো চলমান সময়ের জন্য কিছু লেখাজোখা শিখতাম। সে যাকগে। দেরিতে হলেও এমন একটি সুযোগ পেয়েছি এটাই বা কম কিসের! এজন্য আমি আমার স্রষ্টার নিকট শোকরিয়া গুজার করছি। পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করবেন এটা তাদের দায়িত্ব। কিন্তু ৯০ এর দশকের ধানমন্ডি ল’কলেজের একজন আইনের ছা্ত্র হিসাবে কাউকে গ্রেফতার করার সময় তাকে গ্রেফতার করার যে ওয়ারেন্ট লাগে তা তখন পড়েছি বলে মনে হয়।জানি না বর্তমানে সে আইনে কোন পরিবর্তন এসেছে কি-না? আমি বাসার দরজা খুলছিনা পুলিশ সদস্যরা আমাকে গ্রেফতার না করে ছাড়বেন না। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও আমি বাসার দরজা খুলবনা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এর মধ্যে মনে মনে ভাবলাম শেষ পর্যন্ত পুলিশ যে আমাকে ছাড়বে না তাই এসময় গোসল সহ অনুসাঙ্গীক কাজ সেরে পোশাক পরিধান শেষে ভাবলাম ফজরের নামাজ আদায় করে দরজা খোলে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো। এসময় আমার স্ত্রী বলছিলেন পুলিশ সদস্যদের এভাবে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখা ঠিক হচ্ছে না। তার কথা দরজা খোলে ওদেরকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেই যেন। এসময় আমার বড় ভাই দরজার বাহির থেকে বারবার বলছিলেন আমি যেন দরজাটা খুলি। অবশেষে বড় ভাই ও স্ত্রী অনুরেধে দরজা খুলতেই ৫/৭ জন পুলিশ সদস্য আমার বাসার ভিতর প্রবেশ করে। এসময় আমার পুরো বাড়িটি ছিলো পুলিশে ঘেরা। পুলিশ সদস্যরা আমার বাসায় প্রবেশ করে ওদের কয়েকজন আমার সারা বাসায় কি যেন খোঁজতে শুরু করে এবং আমাকে ওদের সাথে থানায় যেতে হবে নিদের্শ দেয়। এসময় তাদের ২/১ জন আমার বাথ রুমে প্রবেশ করে সেখানেও কি যেন খোঁজছে। ওদেরকে ডেকে বললাম, আপনারা কি কিছু খোঁজছেন? ওরা কোন জবাব না দিয়ে চুপ করে রইলো। তাদের মধ্যে কেউ একজন আমার ব্যবহৃত মোবাইল চাইলো আমি আমার তিনটি মোবাইল ওদের হাতে দিয়ে একটি নষ্ট বলে জানালাম। এসময় ওদের মধ্যে কেউ একজন আমার স্ত্রীর মোবাইলটিও দেয়ার নির্দেশ দিলেন। আমি বললাম আমার স্ত্রী একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ওর স্কুলের কাজে প্রায় প্রতিদিনই স্কুলে যেতে হয় তাছাড়া আমরা তিন কন্যা সন্তানের বাবা-মা। আমাদের বড় ও মেঝো মেয়ে চট্টগ্রাম শহরে লেখা-পড়া করে। মেয়েদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগে থাকতে হয়। তাই আমার স্ত্রীর মোবাইলটি না নিতে অনুরোধ করলাম। বললাম, আমার লেখা-লেখির কাজে আমার স্ত্রী কোনভাই যুক্ত নন। তাই ওর মোবাইলটি না নিতে অনুরোধ করলাম। জবাবে পুলিশ সদস্যরা বললো, থানায় গেলে তার ফোনটি ফেরৎ দিবে। যদিও থানায় গিয়ে ওরা আমার স্ত্রীর মোবাইটি ফেরৎ দিয়েছে। এবার ওরা আমাকে নিদের্শ করলো ঘর থেকে বের হতে। এসময় চারিদিক থেকে ফজরের আজানে ধ্বনি আসছিল। আমি পুলিশের নিকট ফজরের নামাজ আদায় করার অনুমতি চাইলাম। এসময় পুলিশ সদস্যদের কেউ একজন জবাবে বললো, থানায় গিয়ে নামাজ পড়া যাবে। ইতিমধ্যে আমার ব্যবহৃত তিনটি ও আমার স্ত্রী মোবাইলসহ আমার লেপটপটি ওরা ব্যাগে পুরে নিয়েছে। ঘর থেকে বের হতে আমার মনে হলো হয়তো জীবনে আর নাও ফিরে আসতে পারি! তাই স্ত্রী-সন্তানদের উদ্দেশ্যে কিছু বলে যাই।
এসময় আমি হিতাহিত জ্ঞান শূণ্য মানুষ! তাই উপস্থিত বড় ভাই ও আমার স্ত্রীকে ডেকে বললাম, আমি হয়তো আর নাও ফিরে আসতে পারি, আমার লাশ হয়তো নাও ফিরে পেতে পার বললাম, “আমি যদি আর ফিরে নাও আসি তবে তুমি ছোট হওয়ার কিছু নেই। আমি কোন চুরি, ডাকাতি খুন, ধষর্ণ, রাহাজানি বা রাষ্ট্র দ্রোহীতা অথবা রাষ্ট্রের আইন-শৃংখ্লা ভঙ্গেরমত কোন কাজ করিনি। আমি মানুষের কষ্টের কথা, দুঃখের কথা লিখেছি। আমি সরকারের উন্নয়ন কাজে যে বা যারা বাধার সৃষ্টি করছেন তাদের অপকর্মের বিষয়ে লেখা লিখেছি। আর এটা করা যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে তবে সেই আপরাধে আমি অপরাধী। তুমি মাথা উঁচু করে বাঁচবে। তুমি ও আমার সন্তানেরা কারো কাছে ছোট হও এমন কিছু আমি লিখিনি।আমার সন্তাদেরকে বলবে তোমাদের বাবা কোন অন্যায় করেনি। ওরা যেন বুক চাপড়িয়ে গর্বের সাথে বলে আমার বাবা কোন মিথ্যা বা চাঁদাবাজ সাংবাদিকতা করতেন না। সৎ সাংবাদিক হওয়ার কারণে আমার বাবাকে জীবন দিতে হয়েছে। এসময় আমি আমার স্রীকে উদ্দেশ্য করে বললাম আমার মেয়েদের দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিও। ওরা যেন দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে তারপর বিয়ে করে। কারণ এদেশের মেয়েরা এখনো অনেক নিগৃহিত হচ্ছে। আমার তিন মেয়ে যেন লেখা-পড়া শেষে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর বিয়ে করে।’ এসময় পুলিশ দলের নেতৃত্বে থাকা শাহরাস্তি মডেল থানার ওসি(তদন্ত) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম জড়িয়ে ধরে বললেন, ভাই বক্তৃতা দেয়ার কি আছে? আর আপনি ফিরবে না কেন? জবাবে বললাম, আমি অতি সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া সাংবাদিক কিশোর ও তার বন্ধু সম্পর্কে জানি তোমরা কিশোরকে পেনিশে বৈদ্যুতিক শর্ট দিয়ে মেরে ফেলেছ, তাছাড়া তার বন্ধু জীবিত থেকে এখন মৃত প্রায়। তার কান দিয়ে পুঁজ পড়ে। তাড়া তিনি কানেও কম শুনেন। তোমরাতো সেই পুলিশ বাহিনীরই অংশ। এসময় ওসি মোর্শেদ বললেন, চাঁদপুরে এমন কোন ঘটনা ঘটেছে? আমি বললাম, ঘটেনি হয়তো আমাকে দিয়েই শুরু হবে! তিনি জড়িয়ে ধরে বললেন, কি করবো এটা আমার চাকরি।(চলবে)
(লেখাটি জেল থেকে বের হওয়ার পর পরই লিখেছিলাম কিন্তু প্রকাশ করা হয়নি আজ অনেকদিন বাদে পুরনো লেখাটাই নিজের পেজে দিলাম কেউ ভুল বুঝবেন না যেন)