
মামুন হোসাইন : ভাসমান বেডে সবজি মসলা চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের আওয়াতায় প্রায় তিন দশক পুর্বে আমিও পারবো এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে বিষমুক্ত সবজি চাষের আবাদ শুরু করেন। কীটনাশক মুক্ত এবং জৈব সার দিয়ে বিষমুক্ত আবাদ এখন ক্রমশ: উপজেলায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। গত ৫ বছর পুর্বে ভাসমান বেডের এই প্রযুক্তি পুরো জেলার মডেল হলেও ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাকাতিয়া নদীর অববাহিকাকে ব্যবহার করে সেই গতিতে এগুচ্ছে না। যদিও কৃষি বিভাগ ভাসমান তৈরি এবং চাষাবাদ বিষয় প্রতিবছর প্রশিক্ষণ প্রদান ছাড়াও বেড তৈরিতে অর্থ, সার বীজ, ক্ষেত রক্ষায় বেড়া দেয়াসহ নানা ভাবে সহযোগিতা করছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ডাকাতিয়া নদীর অববাহিকার ভাটি অঞ্চল ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু এলাকা বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে থাকায় সেখানে অধিক হারে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে ফরিদগঞ্জের সেকদী, বাগপুর,সাফুয়া,চরকুমিরা, ধানুয়া ও টুবগিসহ প্রায় ৬২ টি এলাকায় কৃষক ১৫ থেকে ২০ ফুট দৈঘের্যর প্রায় ৫ শতাধিক বেড তৈরি করে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করছেন ।
সেকদী গ্রামের চাষি শহিদুল্ল্যাহ তপাদার বলেন, কচুরিপানা দিয়ে তৈরি ভাসমান বেডে নানা জাতের শাক, কচু, লাউ, কুমড়ো, টমেটোসহ বিভিন্ন চারা রোপণ করা হয়। আষাঢ় মাসে শুরু হয় বেড তৈরি। একটা বেড তেরি করতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। আর চারা রোপন করতে সময় লাগে ১ মাস। চারা বড় হলে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে পাইকাররা আসেন ক্রয় করতে।
কৃষক ইব্রাহিম তালুকদার বলেন, এক শতাংশ পরিমাণ ধাপ তৈরি করতে আমাদের প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। আর আয় হয় প্রায় ৮০০০ টাকা। খরচ বাদে প্রতি শতক বেডে থেকে লাভ থাকে ৪ হাজার টাকা। ভাসমান বেডে সবজি উৎপাদন শেষে ওই বেডকে ভেঙ্গে জমিতে ছড়িয়ে দিয়ে আমরা জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করি। শীত মৌসুমে বেডের বদৌলতে চাষে ও রাসায়নিকমুক্ত সবজি উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছি।
শোভান গ্রামের সহিদ , আলমগীর, মিলন গাজী, ধানুয়া গ্রামের কাউছার, ফারুক হোসেন, হানিফ খাঁসহ কৃষকরা জানায়, উপজেলা কৃষিক অফিস ২০০৬ সাল থেকে সহযোগিতা করছে। তবে নিয়মিত তদারকির বিষয়টি স্বীকার করে কৃষকরা জানায়, তারা পরামর্শ অনুযায়ী তারা বেড তৈরি করছে এবং লাভবান হচ্ছেন। গত কয়েক বছর ধরে কোথাও নিজেরা বেড তৈরি করে দিচ্ছে, কোথাও ১৫/২০ ফুটের বেড প্রতি দেড় হাজার টাকা বা ৩ জন শ্রমিকের হাজিরা প্রদান এবং সার,জাল,পাত্র বীজ দিচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস। তবে তাদের সরকারি সহযোগিতা আষাঢ় মাসে দিলে সবচেয়ে বেশি ভাল হয়।
জানা গেছে, বিগত ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৬০ মিটার দৈর্ঘের ১৩০টি বেডের জন্য বেড প্রতি ৮হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে পুরো উপজেলায় ১০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় কৃষি অধিদপ্তর । সেই অনুযায়ী প্রতিবছর এই বরাদ্দ বাড়ার কথা।
ভাসমান বেডে এ বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনের ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিক জামিল মাহমুদ বলেন, কৃষক ভাসমান বেডে ফসল ফলানোর মাধ্যমে সবজি চাষে কৃষকের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সহায়তা এবং পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে। কচুরি স্তুপের ওপর ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি চাষ হওয়ায় এ ফসলের চাহিদা সবার কাছে অনেক বেশি লক্ষ করা গেছে। বিষমুক্ত ফসল ও সবজির বাজারে ও সবস্থানে অনেক চাহিদা যেমন রয়েছে, তেমনি ওইসব সবজি চড়া দামে বিক্রিও হচ্ছে। তাছাড়া ভাসমান বেডে সবজি চাষ শেষে এসব বেডে পরবর্তীতে তরমুজ আবাদ করা সম্ভব। আমরা ইতিমধ্যেই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে তরমুজের বীজ সংগ্রহ শুরু করেছি। এগুলো কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষি ক্ষেত্রে আরেকটি বিপ্লব ঘটবে।