নবী নোমান:
গত প্রায় মাস ব্যাপী টানা হালকা ও ভারি বৃষ্টি এবং সিআইপি বেড়ীবাঁধের বাহিরের জোয়ারের পানি বাঁধের অভ্যন্তরে ঢুকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের লাগানো প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টরের রোপা আমন পুরো বিনষ্ট হয়ে গেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়ছে হাজার হাজার আমন চাষী কৃষকরা। করোনা ও অতি বৃষ্টির কারণে কৃষাণ সমস্যা পরেও জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে লাগানো এই আমন ধানের চারা এখন হাঁটু পানির নিছে। উপজেলা কৃষি অফিস বলেছে, পানি উন্নয়ণ বোর্ডকে পানি সরিয়ে নেওয়া ও স্লুইচ গেইটের লিকেজ পয়েন্ট মেরামতে কথা বলেও কোন কাজ হচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সিআইপি’র অভ্যন্তরে সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর আমন জমিন থাকলেও নানান প্রতিকূলতার কারণে এই মৌসমে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিনে আমন চাষ করা হয়। জুলাইয়ের প্রথমে কৃষকরা আমন চাষের জন্য চারা রোপন করার কথা থাকলেও করোনা ও প্রথমে দিকে বৃষ্টি থাকার কারণে তারা সঠিক সময় আমনের চারা রোপন করতে পারেনি। এই এলাকার প্রায় কৃষকরাই ব্যাংক বীমা ও মজুদদারদের কাছ থেকে ধার দেনা করে করোনার এই পরিস্থিতির মধ্যে জুলাইয়ের শেষের দিকে সিআইপি’র বেড়ীর বাঁধের ভিতরে সারে ৪ হাজার হেক্টর জমিনে কৃষকরা আমন ধান রোপন শুরু করে। এই মধ্যে হঠাৎ করে গত প্রায় এক মাস যাবত টানা হালকা ও ভারি বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে বেড়ী বাঁধের অভ্যন্তরে কৃষকদের জমিন গুলোতে পানি জমতে থাকে। অপরদিকে সিআইপি বেড়ী বাঁধের বৈচাতলী এলাকার স্থাপিত স্লুইচ গেইটের একটি অংশ দিয়ে প্রতিনিয়ত জোয়ারের সময় পানির ঢল বেড়ীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। শাখা খালগুলো ও মরা ডাকাতিয়া নদী দিয়ে প্রবেশকৃত পানিতে আমন চাষি জমিন গুলো তলিয়ে যায়। ফলে, অতি বৃষ্টি আর স্লুইচ গেইটের দূর্বল পয়েন্টে দিয়ে জোয়ারের পানি এবং অতিরিক্ত পানি বের করে না নেওয়ায় ৪ হাজার হেক্টরের রোপা আমল তলিয়ে গিয়ে সম্পূন্ন বিনষ্ট হয়ে যায়।
সিআইপি বেড়ী বাঁধের আমন চাষি এলাকা কড়ৈতলী, নদনা, কবি রূপসা, ইছাপুরা, রামদাসেরবাগ, পাইকপাড়ার একটি বিশাল অংশসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গিয়েছে, আমন চাষিদের ধানের চারা গভীর পানিতে তলিয়ে আছে। এই সময় কৃষক, সিরাজ, শামছুল, খালেকসহ বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা ধার কব্জা করে টাকা এনে আমন ধানের চাষ করেছে। কিন্তু অতি বৃষ্টি ও বেড়ীর বাহিরের পানিতে তাদের ফসল পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া আমনের চারা পানি সরে গেলেও আর লাগানো সম্ভব না। কারণ চারার বয়স ৩০/৩৫ দিন হয়ে গেলে, সেই চারায় আর ভালো ফসল আসে না। ফলে এই বছর সিআইপি বেড়ী বাঁধের আমন চাষিদের আমন চাষ করা বা ফসল ঘরে আনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবমিলে কৃষকরা কঠিন লোকসানে পতিত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিক জামিল মাহমুদ, জানান, জুলাই থেকে আগষ্ট এর মধ্যে আমন ধানের চারা জমিতে লাগাতে না পারলে ওই মৌসমে আমন চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ নিশ্চিত। তিনি বলেন- এই এলাকার আমন চাষিরা এই মৌসমে করোনা অতি বৃষ্টি পরেও প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ করে। কিন্তু টানা বৃষ্টি এবং সিআইপি বেড়ী বাঁধের বৈচাতলী স্লুইচ গেইট দিয়ে জোযারের পানি ঢুকা এবং অতিরিক্ত পানি সরি না নেওয়ার কারণে আমন চাষিদের রোপা আমন হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা এই বিষয়ে পানি উন্নয়ণ বোর্ডকে গত বুধবার চিঠি দিয়ে অবগত করেছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
পানি উন্নয়ণ বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুুল আক্তার, এই প্রতিনিধিকে বলেন, কৃষি অফিস আমাদের বিষয়টি জানিয়েছে। আমরা আগামী দু/এক দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাছাড়া নদীতে পানির চাপ বেশী থাকায় খুব দ্রুত পানি সরিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।