সাড়ে চার মাসেই পবিত্র কোরআনে হাফেজ শিশু আব্দুল আউয়াল

ফরিদগঞ্জ(চাঁদপুর) থেকে নুরুন্নবী নোমান : হাফিজিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করে মাত্র সাড়ে চার মাসেই পবিত্র কোরআনে হাফেজ হওয়ার কৃতিত্ব দেখালো আব্দুল আউয়াল নামে নয় বছরের এক শিশু। শুধু তাই নয় একই সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েও ভাল ফলাফল ধরে রাখার দৃষ্টান্তর দেখায় সে। ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ জামালুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে এই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে শিশু আউয়াল। একই সাথে সে ৫৮ নং পশ্চিম ভাওয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। ২০১৯ সালে সমাপনি পরীক্ষায় সে সকল বিষয়ে শতভাগ নাম্বার পাওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। আব্দুল আউয়াল ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ কড়ৈতলী গ্রামের মৌলভী বাড়ির মো: মোশারফ হোসেন (মোশারফ মাস্টার নামে পরিচিত) ও মাজেদা আক্তারের দুই সন্তানের মধ্যে বড়। তার বাবা ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ।


গর্বিত এই সন্তানের পিতা মো: মোশারফ হোসেন জানান, ২০১০ সালের ২ নভেম্বর জন্ম আব্দুল আউলের । শিশু থেকেই তার মেধার পরিচয় তিনি পেয়েছেন। তাই তার প্রতি বিশেষ যতœ নেয়ার জন্য নিজের বিদ্যালয়ের ভর্তি করান। তিনি জানান,আব্দুল আউয়াল সারাদিন দুষ্টোমি করতো। পড়তো অল্প কিছুক্ষণ। আর তাতেই সে তার স্কুলের পড়া শেষ করতে সমর্থ হতো। এতে আশার উদ্রেক দাদীর নাতির আলেম হওয়ার স্বপ্ন ও চাচা মুফতি মুনওয়ার হোসেনের আগ্রহে তাকে প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সাথে হাফেজ করার জন্য উব্ধুদ্ধ হন। প্রথমে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পিছনের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করালেও একমাস পর ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ জামালুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করান। মার্দাসার নূরানি ও নাজিরা শাখায় ভর্তি হলেও মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের আগ্রহ ও তার মেধা দেখে প্রাথমিক বিদ্যালয়েও তার পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন তিনি। ফলে একসাথে দুটি প্রতিষ্ঠানে সে অধ্যয়ন করেছে এবং সফল হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণি থেকে সমাপনি পরীক্ষায় সকল বিষয়ে শতভাগ নাম্বার পেলেও একই নাম্বার পাওয়া অপর একজন থাকায় এবং আউয়াল হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়ার কারণে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির কারণে তাকে কাসে রোল নাম্বার দুই প্রদান করেন কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২য় শ্রেণিতে তার কাস রোল ছিল ১ এবং তৃতীয় শ্রেণিতে একই কারনে কাস রোল দুই ছিল। পুত্রের ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মোশারফ হোসেন আরো বলেন, তার ছেলে একজন আলেম হওয়ার সাথে সাথে সে যদি সাধারণ শিক্ষা নিয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বা যে কোন পেশায় যেতে আগ্রহী হয়, তবে আমি সেই চেষ্টা করবো।
জামালুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও পরিচালক হাফেজ মাওলানা ইবনে আহমদ ওয়ালী উল্ল্যাহ জানান, আব্দুল আউয়াল তার মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পার এক বছরের মধ্যেই নূরানি ও নাজিরা শেষ করে। পরে ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট হিফ্জ বিভাগে কাস শুরু করে। আর সফল ভাবে শেষ করে চলতি বছর তথা ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারী । মাঝে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য সে ১৫দিনের ছুটি নিয়েছিল। অর্থাৎ সাড়ে চার মাসেই সে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
তিনি জানান, আব্দুল প্রথম দিকে প্রতিদিন ৩পৃষ্ঠা করে পড়া দিতো। শেষদিকে এসে সে দিনে ৬/৭ পৃষ্ঠা করে পড়া দিতে পারতো। আব্দুল আউয়াল এমনিতে সারাদিন খুব একটা পড়া লেখা করতো না। অল্পতেই তার পড়া মুূখস্থ হয়ে যায়। আমি চেষ্টা করেছি, তাকে আমার মাদ্রাসার নিয়মিত পড়ার বাইরে যে সময়টুকু অবশিষ্ট থাকতো সে সময় তাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বই সমূহ পড়ার জন্য সহায়তা করেছি। ফলে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও তার পড়া লেখার বড় ধরনের ক্ষতি হয় নি। তাছাড়া আব্দুল আউয়াল তার প্রতিভার মাধ্যমে একই সাথে দুইটি প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করে সফলতার স্বাক্ষর রাখতে সমর্থ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *